ছোটবেলা থেকে কখনোই ভালো স্টুডেন্ট বলে সুপরিচিত  ছিলামনা।তাই স্বাভাবিকভাবেই খুব বড় কোনো স্বপ্ন দেখার সাহস পর্যন্তও পেতামনা। বড় বোনের প্রেরনায় পড়াশুনা শুরু করা। সেই সুবাদে জেএসসি ও এস.এস.সিতে জিপিএ ৫ পাওয়া।তখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ের স্কুলেই পড়তাম।আমার স্পষ্ট মনে আছে যখন আমি ক্লাস ফোরে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হই তখন আমি গনিতের যোগ -বিয়োগ ছাড়া গুন-ভাগও পারতাম না।ইংলিশ রিডিং পড়াতো দূরের কল্পনা ছিল মাএ।কিন্ডারগার্টেন শেষ করে পিএসসিতে কোনমত ১ম বিভাগ পেয়ে চতরা উচ্চ বিদ্যালয়ে(ইউনিয়ন পর্যায়ের স্কুল)  ভর্তি হই।২০১২ সালে জেএসসিতে জিপিএ ৫ ও ২০১৫ সালে এসএসসি তেও জিপিএ ৫ পেয়ে পাশ ও করে যাই।তারপর কোন কলেজে এডমিট হবো তা নিয়ে পড়ে গেলাম মহাচিন্তায়। শেষমেশ এডমিট হলাম ক্যান্ট পাবলিক স্কুল & কলেজ, দিনাজপুরে (CPSC,BUSMS).
ক্যান্ট পাবলিকে স্বাভাবিকভাবেই ক্লাশ হয় নিয়মিত। পড়াশুনা নিয়ে চাপে থাকতাম বাট কি পড়বো, কিভাবে পড়বো কিছুই বুঝতাম না।রুম্মমেট বন্ধু আহসানের  সহযোগিতা ভুলবার নয়।সেই সাথে চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার জীবনের সেরা শিক্ষক আঃ রাজ্জাক স্যারের প্রতি। কলেজের প্রথম ৬ মাস শেষ কিন্তু এখনো আমার সিদ্ধান্তই হয়নি আমি করবো,কি আমার টার্গেট। যখন অন্যান্য বন্ধুরা কোন কোচিং এ এডমিট হবে তাও ফাইনাল।ঠিক সেই সময় রংপুর মেডিকেল কলেজের ডাঃ মিমি আপু খোলাহাটিতে একটি প্রাইভেট ব্যাচ শুরু করেন।আমিও ওনার কাছে বায়োলজি পড়া শুরু করি।আপুর প্র্ত্যেকটি কথায় এত্ত্ব অনুপ্রেরনা পেতাম যে রুমে গিয়ে বায়োলজি ছাড়া আর কিছুই পড়তে ইচ্ছা করতো না।তারপর ফাইনাল ডিসিশন নিলাম যে মেডিকেলই ফাইনাল যা হয় হবে।

তারপর প্রতিটি দিন ক্ষন শুধু মেডিকেলেরই স্বপ্ন দেখতাম। তারপর এইস.এস.সি পরীক্ষা আসলো।বহুকাক্ষিত জিপিএ ৫ ও পেলাম।বুকের বা পাশটায় তখন মেডিকেল মেডিকেল সুপ্ত ধ্বনিটি প্রতিধ্বনি হয়ে বাজতে লাগলো। এইস.এস.সির আগেই অবশ্য রেটিনায় এডমিট হয়েছিলাম। 

তারপর কোচিং এর উদ্যেশ্যে ঢাকায় গেলাম।উঠলাম বোনের বাসায়।বোনের বাসাটা ছিল কুড়িল বিশ্বরোডে আর কোচিং ছিল সেই ফার্মগেটে।যাতায়াতের একটা সমস্যায় ছিলাম।কিন্তু অনেক ভালো ছিলাম বোন -দুলাভাইয়ের আদরের ছোট্ট ভাই হয়ে ছিলাম।আমার অন্যান্য বন্ধুরা তখন নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত ছিল।

নিয়মিত কোচিং এ ক্লাশ ও পরীক্ষা দিতাম। পরীক্ষা গুলোতে প্রথমে ভালো করতে না পেলেও আস্তে আস্তে ভালো করতে লাগলাম।মনেপড়ে একদিন কোচিং এ জীববিজ্ঞান সাবজেক্ট ফাইনাল পরীক্ষায় সারাদেশে রেটিনার সব গুলো শাখার মধ্যে ফার্স্ট হয়েছিলাম,দিনটি আমার জন্য বিশেষ ছিলো।কেনোনা এর আগে এতো বড় কোনো পরীক্ষায় কখনোই আমি ফার্স্ট হয়নি।ওইদিনটির পর থেকে কখনোই একবারের জন্যও আর এই কথাটি ভাবিনি যে আমি মেডিকেলে চান্স পাবোনা।

অবশেষে আসলো সেই ৭ অক্টোবর,  ২০১৭ মেডিকেল এডমিশন টেস্টের দিন।পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই দিলাম কিন্ত অনেক গুলো শিউর প্রশ্ন ভুল করে চান্সটা মিস করেছিলাম।আমার মোট প্রাপ্ত নম্বর ছিল ২০০+৬৭.৫=২৬৭.৫ । 
রেজাল্টের দিন সন্ধ্যায় এতোটা কেঁদেছিলাম যে ওই ভয়াবহ দিন আর ক্ষন এর কথা এখনো মনে হলে আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে যায়।রেজাল্টের পরবর্তী ৩ দিন পর্যন্ত বাসায় রান্না অফ ছিল। পাশের বাসার আপা খাবার দিতো। আমি সহ আমার পরিবারের সবাই খুব শক পেয়েছিলাম। তারপর থেকে আমি আর আমার পরিবারের কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারতাম না আর তারাও বলতো না।তারা চোখে চোখে তাকালেই কেদে ফেলতাম।

মেডিকেল পরীক্ষার  রেজাল্টের পর দিনই ছিল জাবির ডি ইউনিটে পরীক্ষা। মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম।ভেবেলিলাম আর পরীক্ষায় দিবোনা।কিন্তু বন্ধুদের সহযোগিতায় শেষ পযর্ন্ত পরীক্ষা  দেই।আর মোটামুটি একটা সিরিয়ালও (৬৪৭)  আসে।তারপর মানসিকতা একটু শক্ত হয়। তারপর  জবি(৪৮৭তম),রাবি এফ ইউনিট(৩৭তম),রাবি জি ইউনিট(১৩৩তম) তম হই।
মেডিকেল পরীক্ষার  ১ মাস পরে হয় ডেন্টাল পরীক্ষা। কিছুদিন আগের পড়া গুলোই চোখ বুলিয়ে নিয়ে আল্লাহর নামে ডেন্টাল এক্সামে বসি।আর ৪৬২ তম হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল ইউনিটে চান্স পেয়ে যাই।তারপর কারো কথায়  কান না দিয়ে ডেন্টালে ভর্তি হয়ে যাই। পরে মাইগ্রেশন নিয়ে অবশ্য রাজশাহী মেডিকেলে আসি।তারপর ২ মাস ক্লাশ করার পর সেকেন্ড টাইম দেওয়ার ভূত মাথায় চেপে বসে।আবার ভয়ও লাগতো।শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেই যে ২য় বার মেডিকেল এডমিশন দিবোই। তাই ডেন্টালের পাশাপাশি রাত জেগে রোজ সেকেন্ড টাইমের পড়া পড়তাম। তখনকার দিনগুলো খুবই ভয়ানক ছিল।একদিকে মেডিকেল হোস্টেলের প্যারা অন্যদিকে ডেন্টালের পড়া,সেকেন্ড টাইমের পড়া তার উপর টিউশনি ও করাতাম।
শেষমেশ জুলাই মাস থেকে ডেন্টালের ক্লাশ বাদ দেই।

আর এভাবেই চলতে থাকে  আমার প্রিপারেশন।

তারপর আসে সেই ৫ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং। মেডিকেল এডমিশনের দিন।পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হয়েছিল।ফলশ্রুতিতে এক্সাম খুব একটা ভলো হলো না।চান্স পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
কিন্তু না আল্লাহ আমার কষ্টের ফল আমাকে দিয়েছেন।
আমাকে নিরাশ করেননি। ৭.৫ মার্ক কর্তনের পরেও আমি রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি
। সেকেন্ড টাইমে আমার মোট মার্ক ছিল ২০০+৭১.৭৫=২৭১.৭৫ । আসলেই আল্লাহ পরিশ্রমীদের নিরাশ করেননা।

আমি যেন একজন ভালো মানুষ এবং ভালো ডাক্তার হয়ে আমার পরিবার,আত্নীয়স্বজন,,সমাজ তথা দেশের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।
কষ্ট করে এতোক্ষণ  সময়ক্ষাপন করে আমার গল্পটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী 👏।

মোঃ সাব্বির হাসান রাব্বি 
রংপুর মেডিকেল কলেজ
Rp-48
সেশনঃ২০১৮-১৯ ।