গতকাল গোসল করার সময় একটা প্রশ্ন মাথায় এলো। সিক্স প্যাক জিনিসটা কি ন্যাচারাল? কৌতুহল থেকে গুগলে সার্চ দিয়ে আমি যা জানতে পারলাম, তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না রাসেল ভাই!


১.

ফ্যাট শব্দটা শুনলেই আমাদের মাথায় ব্যাড কথাটা আসে। কিন্তু ফ্যাট শব্দটাকে এত অবহেলা করা বৈজ্ঞানিকভাবে অযৌক্তিক। কেননা American Council on Exercise এর ডাক্তারদের রায় অনুযায়ী পুরুষদের জন্য ''ফিট" কথাটা প্রযোজ্য হয় ব্যক্তির দেহে ১৪-১৭% ফ্যাট বা চর্বি থাকলে। মহিলাদের জন্য যা ২১-২৪%। 

কিন্তু যখনই কোন পুরুষ সিক্স প্যাকস বানাতে চায়, তখন তার ফ্যাট পারসেন্টেজ হতে হয় ৬-১৩%, মহিলাদের জন্য যা ১৪ -২০%। আমাদের প্রিয় পুরুষ মডেলদের অধিকাংশের ফ্যাট পারসেন্টেজ ১০% নিচে। আপনি যদি একজন প্রফেশনাল অ্যাথলেট না হন, তবে আপনাকে এই সিক্স প্যাক শো অফ সংক্রান্ত অল্প ফ্যাটের চরম মূল্য দিতে হবে। 


কেননা প্রয়োজনের চেয়ে অল্প ফ্যাটের কারণে-


*আপনার ব্লাডার কন্ট্রোল পারফরমেন্স কমে যাবে

*হজমে জটিলতা দেখা দিবে

*শরীরে তাপ উৎপাদন সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হবে

*হরমোন নিঃসরণে জটিলতা হবে

*রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে

*চর্বির স্বাস্থ্যসম্মত আবরণী না থাকায় ইনজুরিতে বেশি পড়বেন

*মাংসপেশিতে, হাড়ের জোড়ায় তীব্র ব্যথা হবে

*বিষন্নতা, অবসাদ এবং ক্লান্তির পরিমাণ বেড়ে যাবে 


এছাড়া


*নারীরা রজঃচক্রে নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করবেন

*মেরুদন্ডের হাড় বাঁকা বা সোজা হয়ে যেতে পারে 



প্রফেশনাল অ্যাথলেট যেমন ফুটবলার বা লাইটওয়েট এমএমএ ফাইটারদের তেমন কোনো সমস্যা হয়না, কেননা এটাই তাদের লাইফস্টাইল এবং অর্থ উপার্জনের জন্য তাদের বিশেষ কিছু শারীরিক দক্ষতা প্রয়োজন হয়। সাধারণ মানুষের মতো তাদের অফিস আদালত করতে হয়না। ঠিকমতো খাওয়া, ঘুম, অ্যাথলেট মেন্টালিটি, ডক্তর চেকআপ তাদের রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে পড়ে। 


২. 

সিক্স প্যাক তৈরির জন্য একজন গড়পড়তা মানুষকে যে পরিশ্রমটা করতে হয়, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সিক্স প্যাক আছে এমন কাউকে দেখে ভালো লাগলেও, ব্যক্তিটি সুস্বাস্থ্যবান বা তার দেহে পর্যাপ্ত শক্তি আছে, এমন কোন কথা নেই। বরং মডেলদের মতো মাংসল দেহের জন্য কম ফ্যাট, নিয়মিত ডায়েট, নিয়মিত জিম একজন মানুষের স্বাভাবিক কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়। এই পরিশ্রম এবং কম খাওয়া একজন মানুষকে তীব্র মানসিক হতাশায়ও ফেলে দিতে পারে। অধিকাংশ মানুষ যারা বডি বিল্ডিং করেন, তারা একাকীত্বে ভোগেন। সুতরাং, টিভিতে বা বিলবোর্ডে আমরা যেসব মানুষকে হাসিখুশি দেখি, তাদের জীবনের জটিলতাগুলো আমরা কোনদিনই অনুধাবন করতে পারবো না। ইনস্টাগ্রামে কয়েকটা বেশি লাইকের জন্য সিক্স প্যাকের পেছনে দৌড়ানো মানুষেরা অনেকেই ঐতিহাসিকভাবে বিজ্ঞানে কাঁচা ছিলেন।


৩.

মানবসভ্যতার একটা বড় সময়ে শুধু দরিদ্র, শ্রমিক এবং সৈনিকদের চর্বিহীন মাংসল দেহ দেখা যেত। একটু আকটু মেদ বরাবরই আভিজাত্য এবং প্রাচুর্যের প্রতীক ছিলো। তবে সব হিসেব নিকেশ পাল্টে যায় এম টিভি, আধুনিক হলিউড এবং ফাস্টফুড কালচারের উত্থানের পরে। এমনকি চর্বি মাত্রই একটি খারাপ জিনিস, এমন ধারণা প্রচার করতে হারভার্ডের দূর্নীতিগ্রস্থ গবেষকদেরও ব্যবহার করেছে চিনিজাত খাদ্য উৎপাদনকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। 

এসবের তলানিতে আরেকটি ভয়ঙ্কর সত্য লুকিয়ে আছে। অত্যধিক জিম করা বডিবিল্ডার টাইপের মানুষেরা যখন বৃদ্ধ হয়ে যান বা জিম করা ছেড়ে দেন, তখন তাদের দেহে এর ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অধিকাংশ সময় তারা মোটা হয়ে যান এবং দেহের কার্যকর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।


৪.

সুতরাং সিদ্ধান্ত আপনার, সামান্য সময়ের জন্য অন্যের কাছে আকর্ষনীয় হতে এত বড় ঝুঁকি নিবেন? নাকি পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভাস ও স্বাস্থ্যকর শরীর চর্চার মধ্য দিয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন? বরাবরের মতোই শুভকামনা।